সংবাদচর্চা রিপোর্ট
বৃষ্টি হয়েছে। এরপর চলেগেছে ৮ দিন। এ দীর্ঘ সময়েও পানি কমেনি ডিএনডির নিন্ম অঞ্চলে। কিন্তু কেন পানি কমছে না এ প্রশ্নে উত্তর হয়তো জানা নেই অনেকেরই। এ নিয়ে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের কাছে আসছে নানা অভিযোগ। এলাকা গুলোর মানুষদের দুর্ভোগও কম পোহাতে হচ্ছে না।
সকল অভিযোগ ও দুর্ভোগ নিয়ে আজ ৯ জুন ডিএনডি পাম্প হাউজের মুখমুখি হয়েছিল গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় পাম্প হাউজের দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছার তাদের নানা সমস্যা ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
জানা গেছে, উন্নত পদ্ধতিতে ইরিগেশন চাষাবাদের জন্য ১৯৬৫ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা থানা এলাকার ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ প্রজেক্ট নির্মাণ শুরু হয়ে ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। বাঁধের ভেতর কংস নদী ও মলখালীখালসহ ৯টি খাল ছিল। আরও ছিল ৯টি শাখা খাল। এ ছাড়াও ছিল ২১০টি আউটলেক, ১০টি নিষ্কাশন খাল। ইরিগেশন খালের দৈর্ঘ্য ৫১ দশমিক ২০ কিলোমিটার। এ বিশাল অঞ্চল থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশনক্ষমতার চারটি পাম্প ও কয়েকটি ছোট পাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। ইরিগেশন প্রজেক্টের এখন কোনো কার্যক্রম নেই। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সারাদেশ পানিতে ডুবলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে ছিল বন্যামুক্ত। এরপর অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, ইমারত ও কলকারখানা নির্মাণ করা হয় ব্যাপকভাবে। বর্তমানে এলাকাটিতে প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে।
পাম্প হাউজের দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছার জানান, ৫১২ কিউসেক পানি নিষ্কাশনক্ষমতার পাম্প রয়েছে আমাদের। সেগুলোর বয়সও ৫৫ থেকে ৬০ বছর। এতদিনের পুরনো সরঞ্জাম কার্যক্ষমতার সর্বোচ্চ ষাট ভাগ সার্ভিস দিতে পারছে। অথচ, ডিএনডিতে ৩২০০ কিউসেক পানি সেচ করার প্রয়োজন। যা আমাদের ক্ষমতার সাত-আট গুন।
রাম প্রসাদ বাছার আরও জানান, মার্চের ৫ তারিখ থেকে আমাদের পাম্পগুলো লাগাতার চলছিলো। সপ্তাহ খানেক আগে আবর্জনা জমে আমাদের দুইটি পাম্প অকেজো হয়ে পড়েছে। আবর্জনা পরিষ্কার করতে আরও অন্তত দুই দিন লাগবে। যদি অন্য কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হয়ে থাকে, তাহলে পাম্প গুলো উঠিয়ে মেরামত করতে আরও অন্তত ১০ দিন সময় প্রয়োজন। যেখানে তিন হাজার কিউসেকের বেশি পানি সেচতে হবে, সেখানে দু’টি পাম্প দিয়ে ২‘শ কিউসেক পানি সেচতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় আগামীকাল আমরা আরও দু’টি নতুন পাম্প বসাচ্ছি। যার ক্ষমতা ৮০ কিউসেক হবে।
২৫ বছর আগে ডিএনডির জলাবদ্ধতা আমাদের ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। ওই সময়ই সরঞ্জাম গুলো নবায়ন করা প্রয়োজন ছিলো। দীর্ঘ দিন ধরেই নতুন সরঞ্জাম দাবি করছিলাম। অনেক অপেক্ষা ও দুর্ভোগের পর অবশেষে সেনাবাহিনীর পর্যবেক্ষনে আমরা আশার আলো দেখছি। আমাদের ডিএনডি হাউজের পাশেই আরেকটি নতুন পাম্প হাউজ হচ্ছে। এটি জুন মাসেই চালু হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ থাকায় কার্যক্রম শুরু করতে দেরি। আশা করি আগামী দুই মাসের মধ্যেই পাম্প হাউজ চালু করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, ডিএনডি প্রকল্পের অধীনে ৪ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে আরও ৫টি পাম্পহাউজের প্রস্তাবনা আসে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী। একটি পাম্পহাউস আদমজী নগরে এবং আরেকটি হবে শিমরাইলে পুরোনো পাম্পহাউসের পাশে। এ ছাড়া শ্যামপুর, পাগলা, ফতুল্লায় আরও একটি করে পাম্পস্টেশন বসানো হবে। এসব পাম্পহাউস ও স্টেশন বসানোর পর শুরু হবে বাঁধের ভেতরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল সংস্কারের কাজ। এই প্রকম্প বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গতকাল ফতুল্লার ইসদাইর এলাকা ও আজ কুতুবপুরের তক্কারমাঠ এলাকার খাল খননের কাজ ধরেছে সেনাবাহিনী।”